ডেস্ক রিপোর্টঃ (কে জামান) নারায়নগঞ্জ ২৩ অক্টোবর ২০২২ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে বলেছেন, এখন নদীর তরঙ্গধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন কিন্তু ডিসেম্বর বিজয়ের মাসে শুনতে পাবেন জনতার সমুদ্রগর্জন। শুনবেন জনতার বিজয়ের জয়ধ্বনি। লাখো লোক আপনাদের সঙ্গে নেই। আমাদের সঙ্গে আছে। আজকের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সত্ত্বেও এ সম্মেলনই তার প্রমাণ। এ লাখ লাখ লোক নিয়েই খেলা হবে। নারায়ণগঞ্জের ওসমানী স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি রোববার বিকালে এসব কথা বলেন। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোঃ শহিদ বাদল কে পুনরায় বহাল রাখার ঘোষণা দিয়ে নতুন কমিটি তৈরির নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি। এ শাখার পরবর্তী সম্মেলনের তারিখ বা নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা চলতি সপ্তাহেই দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
বিএনপির উদ্দেশে সেতুমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বপ্ন ভুলে যান। পৃথিবীর সব দেশে যে নিয়মে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সেই একই নিয়মে নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে। সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। বিএনপির মতো হোন্ডা-গুন্ডা নিয়ে রাত ১১টায় ভোট শেষ করার দিন এখন শেষ। এসবের বিরুদ্ধে খেলা হবে। ভোট চুরি ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে খেলা হবে। হাওয়া ভবনের দুর্নীতি লুটপাটের বিরুদ্ধে খেলা হবে। এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে রোববার সকাল থেকেই পুরো নগরীতে ছিল সাজসাজ রব। জেলার সব থানা ও উপজেলা ইউনিট থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী বাদ্য বাজিয়ে, হাতি ও ঘোড়ার গাড়ি আর ব্যানার-ফেস্টুনসহ মিছিল নিয়ে সম্মেলনে যোগ দেন। বেলা ৩টা নাগাদ পুরো স্টেডিয়ামের মাঠ ও গ্যালারি প্রায় ৪০ হাজার নেতাকর্মীতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে স্টেডিয়াম ছাপিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীর ঢল ছিল প্রধান সড়কসহ আশপাশের খালি জায়গায়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, নারায়ণগঞ্জে এসে বারবার ইতিহাস মনে পড়ছে। এ নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের জন্ম। আমার কাছে আজ খুব ভালো লাগছে। শামীম ওসমান আপনাদের প্রিয় নেতা, শামীম ফাইটার পলিটিশিয়ান। শামীম লিডার অব অ্যাকশন। তার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের পরপর তিনবার নির্বাচিত মেয়রকে একই মঞ্চে দেখছি। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার চেয়ে ভালো, সৎ ও যোগ্য লোক নেই। আগামীতেও বাংলার জনগণ শেখ হাসিনাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।
সম্মেলনের উদ্বোধক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে না বিএনপি। কারণ, তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। দীর্ঘদিন পর নারায়ণগঞ্জে সম্মেলনে আপনাদের উচ্ছ্বাস দেখছি। সব আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের মানুষ ভূমিকা রেখেছেন। আজকের এ চিত্র প্রমাণ করে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে।
বিশেষ অতিথি স্থানীয় সংসদ-সদস্য শামীম ওসমান বলেন, আমরা প্রমাণ করতে চাই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি ছিল, আছে এবং থাকবে। যাকে আমি মা মনে করি, সেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জে সেতু উদ্বোধনের দিন আমার দাদা খান সাহেব ওসমান আলী, আমার বাবা একেএম সামসুজ্জোহা ও বড় ভাই নাসিম ওসমানের অবদানের কথা স্মরণ করে যে বক্তব্য দিয়েছেন এরপর আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, মানুষ তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন চায়। চন্দন শীল চেয়ারম্যান হওয়ায় সবাই খুশি হয়েছেন। কারণ তিনি তৃণমূলের কর্মী। শেখ হাসিনাকে শক্তিশালী করতে তৃণমূলের ত্যাগী নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নাসিক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সূতিকাগার। নারায়ণগঞ্জ থেকে মিছিল না গেলে ঢাকায় সমাবেশ হতো না। এখানে নেতৃত্ব দিয়েছেন শামসুজ্জোহা, আলী আহমদ চুনকা, নাজমা রহমানসহ প্রয়াতরা। সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনীতি করতে হবে। ঐক্যের আওয়ামী লীগ গড়তে চাই। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে গুম-খুনের রাজনীতি বন্ধ করে সাধারণ মানুষের রাজনীতি চাই।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইয়ের সভাপতিত্বে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, নজরুল ইসলাম বাবু এমপি, আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কার্যকরী পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাওছার, আনোয়ার হোসেন, সাহাবউদ্দিন ফরাজী প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘খুলনায় বিএনপির এক লক্ষ লোকও হয়নি। কিন্তু লক্ষ লক্ষ বলে দলটির নেতারা চিত্তকে সুখ দিতে মনকলা খাচ্ছে। তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, কত হাজারে লক্ষ বলা হয়? ময়মনসিংহ-খুলনায় কত হয়েছে সেটি সাংবাদিকরা দেখেছেন। এর সঙ্গে বাস্তবতা নেই। তবে চট্টগ্রামে লাখের কাছাকাছি লোক হয়েছে। ফখরুল সাহেবকে বিকালে (নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন) আমন্ত্রণ জানিয়েছি একটা জেলা সম্মেলনে কত মানুষ হয় দেখার জন্য।’